অশ্রুসিক্ত বেগম জিয়া ও বর্তমান বিএনপি
ঢেকে দিওনা বাবার মুখটা আরেকটু দেখি”
ছবিটা দেখে হঠাৎ অন্তর কেঁদে উঠল। সেসময়ের দৃশ্যগুলো সোস্যাল মিডিয়া এবং টেলিভিশন পেপার পত্রিকার মাধ্যমে আমরা সবাই দেখেছি। কি নির্মম পাশবিক নির্যাতনের মাধ্যমে স্থায়ী রোগে আক্রান্ত করে দিয়ে একটা সাদাসিধা মানুষকে দুনিয়া থেকে বিদায় করার ব্যবস্থা করেছিল, তা কে না জানে! যারা আওয়ামী লীগ কে ফেরাতে চাও সেইসব বিএনপি নেতাদের উদ্দেশ্যে বলছি- শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান ও বেগম খালেদা জিয়ার ঔরসে জন্ম নেওয়া কনিষ্ঠ সন্তান প্রয়াত আরাফাত রহমান কোকো মোটেই রাজনীতিতে সম্পৃক্ত ছিলেন না, তিনি ছিলেন একজন ক্রিড়াবিদ ও সফল ব্যবসায়ী। কিন্তু ওয়ান ইলেভেনের ইবলিশ তৎকালীন সেনা প্রধান জেনারেল মইনও তার সহচর ব্রিগেডিয়ার বারী-আমিনরা বেগম জিয়াকে দেশ ছাড়তে বাধ্য করতে তার ছোট ছেলে কোকোকে টার্গেট করার মাধ্যমে। কিন্তু বেগম খালেদা জিয়া আপোষহীন সংগ্রামী জীবনের ঐতিহ্য ধারন কারী একজন দেশপ্রেমিক রাজনীতিবিদ হিসেবে তাদের সেই কু-চক্রান্তের কাছে মাথা নত করে নিজের দেশ ছাড়তে রাজি হননি। যার খেসারত হিসেবে একেরপর এক পাশবিকতার মুখোমুখি হয়ে তিনি এখন জীবনের পড়ন্ত বিকেলে এসে পৌঁছেছেন। ২০০৭সালের ৩সেপ্টেম্বর মা বেগম খালেদা জিয়ার সাথে আরাফাত কোকো কে গ্রেফতার করে ওয়ান ইলেভেনের সরকার, কারাগারে নির্মম নির্যাতনের মাধ্যমে মৃত্যুর পথযাত্রী বানিয়ে ২০০৮সালের মে মাসে মুক্তি দেয় তৎকালীন সরকার। এরপরে ২০০৮সালের ১৮ই জুলাই স্ব পরিবারে মালয়েশিয়া চলে যান কোকো। রাষ্ট্রীয় বাহিনীর হাতে নির্মম নির্যাতনের কারণে বেগম জিয়ার প্রয়াত সন্তান আরাফাত রহমান কোকোর শরীরে বিভিন্ন জটিল রোগের প্রভাব ব্যাপকভাবে বেড়ে গিয়েছিল। এবং বিশেষ কিছু কঠিন রোগের উপসর্গ দেখা দিয়েছিল। একপর্যায়ে অবস্থা এমন হয়েছিল যে, তাকে বুকে পিঠে ইলেক্ট্রিক যন্ত্রের মাধ্যমে আঘাত করার কারণে তার হার্টে সেটার প্রভাব পড়ে, যার কারণে তার শরীরে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত শ্বাস কষ্টের মত কঠিন রোগ ছিল, ইনহেলার ব্যবহার না করলে শরীর নিথর হয়ে যেত। মাঝেমধ্যে শরীর অকেজো হয়ে যেত। তার সেই শারীরিক অসুস্থতাটাকে ওই সময় ব্যাপকভাবে তার ক্যারেক্টার অ্যাসাসিনেশন করা হয়। তাকে মাদকাসক্ত বলে প্রচার করা হয়। ঠিক এইখানেই সুযোগ টা তারা পেয়ে বসে। সেই মারণব্যাধি রোগের সাথে যুদ্ধ করে টিকতে না পেরে তাকে মালয়েশিয়ায় নির্বাসনে থাকা অবস্থায় ২০১৫সালের ২৪জানুয়ারী পরপারে চলে যেতে হল। মনে আছে সেই দিনের কথা! যেদিন কোকোর মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়ার পর বাংলাদেশের দৃশ্যটা কত অদ্ভুত এক নৈরাশ্যের মুখোমুখি হয়েছিল?! তখন খালেদা জিয়া দিনের পর দিন গুলশান কার্যালয়ে বন্দী। সেখানে পানি বিদ্যুত গ্যাসের লাইন কেটে দিয়েছিল তৎকালীন হাসিনার সরকার। এমনকি খাবারও ছিল না। এমন পরিস্থিতিতে কোকোর মৃত্যু বরণের খবর আসে। শোকে ভেঙে পড়েন মা খালেদা জিয়া। মালয়েশিয়া থেকে কোকোর লাশ নিয়ে আসলে অবরুদ্ধ কার্যালয়েই শেষবারের মতো সন্তানকে দেখেন তার মজলুম মা খালেদা জিয়া।
ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকারের তাড়ার কারণে দ্রুত লাশ কবর দেওয়ার জন্য নিতে চাইলে খালেদা জিয়া কাঁদতে কাঁদতে বলেছিলেন,
“ঢেকে দিও না, বাবার মুখটা আরেকটু দেখি”। সেই কথাটা শুনে বাংলাদেশের ১৬কোটি মানুষ তখন কেঁদেছিল। আমি বিএনপি করি না, বিএনপির বেশিরভাগ নীতি আদর্শের সাথে আমাদের অমিল রয়েছে, জুলাই বিপ্লবের পরবর্তী বিএনপির রাজনীতির সিংহভাগই তাদের অতীতের সাথে স্ববিরোধী রাজনীতি, এগুলোকে সাপোর্ট করা আমাদের পক্ষে ততক্ষণ পর্যন্ত সম্ভব নয়, যতক্ষণ না আগের সেই শহীদ জিয়া এবং খালেদা জিয়ার ঐক্য প্রয়াসী বিএনপির ভুমিকায় তারা না আসবে। কিন্তু একজন মজলুম মায়ের সেই অসহায়ত্ব সেদিন যারা দেখেছে, যার ভিতরে মনুষ্যত্ব বলতে কিছু আছে, তার হৃদয় দুমড়েমুচড়ে দেওয়ার কথা। অথচ সেসময়ের অবৈধ দখলদার শাসক খুনি হাসিনার মাদকাসক্ত দুর্নীতিবাজ পুত্র তৎকালীন সরকারের তথ্য উপদেষ্টার পদে থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা চুরির মাধ্যমে মা ছেলে ভাগবাটোয়ারা করে মজামাস্তিতে ব্যস্ত ছিল। নারী মদ আর দেশের টাকা চুরি করে বিদেশে জমানো টাই ছিল হাসিনাপুত্র জয়ের একমাত্র পেশা। খুনি হাসিনার মনে সে নিজেও একজন মা হিসেবে এতটুকু দয়াও তখন হয় নি যে, খালেদা জিয়ার বড় ছেলেটা অন্তত ছোটভাই টাকে দাফন করে তার গর্ভধারিণী মাকে শান্তনা দেওয়ার জন্য দেশে আসুক। তখন তার দুর্দান্ত ক্ষমতার রাজ্যে হাসিনা চাইলে কি তারেক রহমানকে সেই সুযোগটা দিতে পারত না!? কিন্তু এই রাক্ষসী খুনি লেডি ফেরাউন কাফেরের পরাণে সেই মায়াটুকু ছিল না তখন। সে সময় দেশরক্ষার আন্দোলন করতে গিয়ে অবরুদ্ধ থাকা খালেদা জিয়ার বাসার সামনে দেখতে যাওয়ার নাম করে গোয়েন্দা সংস্থার মাধ্যমে কি সুন্দর মানবতার মা সেজে অভিনয় করেছিল, তা কি বর্তমান বিএনপির ভারত পূজারি নেতারা ভুলে গেছে? সেই সময়গুলোর নিমর্মতা কি বর্তমান ভারতীপ্রেমী বিএনপি নেতাদের কি একবারও মনে পড়ে না? আওয়ামী লীগ আবার ফিরে আসার সুযোগ পেলে অবস্থা কি করবে, তা কি হাসিনার ইদানিংকালের টেলিফোনের আলাপগুলো শুনলে বুঝা যায় না?
অবর্ণনীয় জুলুমের শিকার হয়ে দুনিয়া থেকে বিদায় নেওয়া আরাফাত রহমান কোকোর কবরকে আল্লাহ যেন জান্নাতের টুকরা বানিয়ে দেন, রমজানের এই পবিত্র দিনে সেই দোয়া করি। কত অসহায়ত্ব! কী নির্মমতা! দুইটা ছেলে ছিল, একটা একেক দেশে নির্বাসিত, মা দেশে একা। এর মাঝে ছোট ছেলেটা দুনিয়া থেকে চলে গেল। বড় ছেলেটা লন্ডন থেকে মালয়েশিয়ায় গিয়ে জানাযায় অংশ নিয়ে আবারও লন্ডনে চলে যেতে হল, কলিজার টুকরা ছোট ভাইটার লাশের সাথে করে নিজের মায়ের কাছেও আসতে পারল না। একদিকে স্বামীহারা অন্যদিকে বুকের নাড়িছেঁড়া ধন ছোট ছেলেটা চলে গেল, বড় ছেলেটাকে পাশে পেলে অন্ততঃ মা হিসেবে নিজের মনকে শান্তনা দেওয়া যেতো! আহারে মা! আহারে … কেমনে এই শোক সইলো সন্তানের লাশের চেহারা দেখে…
তখন একজন মজলুম অসহায় মা হিসেবে তার প্রতি ফোঁটা চোখের পানি নিশ্চয়ই আল্লাহর আরশে গিয়ে পৌঁছেছ। যার ফলে আজকে খুনি হাসিনার পরিবার ছন্নছাড়া হয়েছে। আল্লাহর বিচার আখিরাতে তো আছেই, সেইসাথে দুনিয়াতেও কিছু দেখা যায়, এর জ্বলন্ত প্রমাণ শেখ পরিবারের বর্তমান অভিশপ্ত অবস্থা দেখলে বুঝার বাকি থাকার কথা নয়। সেই মজলুম খালেদা জিয়ার বিএনপির নেতারা কেমনে আবারও জালেম আওয়ামী লীগকে ফিরাতে চায়? নাহলে কেমনে রিজভী বলে- যারা নির্দোষ আওয়ামী লীগ, তাদের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ রাজনীতি করলে কোন আপত্তি নাই?! কেমনে মির্জা ফখরুল বলে- আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার ব্যাপারে কোন মন্তব্য করতে পারব না! কেমনে শামসুজ্জামান দুদু বলে- আওয়ামী লীগ রাজনীতিতে না আসলে রাজনীতির পথ বিকশিত হবে না! অবাক লাগে। এরা ভারতের খপ্পরে পড়ে নিজেরা তো শেষ হবেই, সাথে দল দেশ এবং জাতিকেও শেষ করবে। কেমনে খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা ফজলুর রহমান বলে- আওয়ামী ৫-১৫বছর পরে হলেও ফিরে আসবে! বিএনপির নেতারা কেমনে বলে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী বিএনপিতে আশ্রয় নিতে পারবে?! তাহলে কি বেগম খালেদা জিয়ার দীর্ঘশ্বাস মিশ্রিত চোখের সেই অশ্রু বৃথা যাবে। বাংলাদেশের আপামরসাধারণ জনতা মনে করে কখনোই সে অশ্রু বৃথা যাবে না ইনশাআল্লাহ। বেগম খালেদা জিয়ার শারিরীক সুস্থতা কামনা করি। আশা করি- তিনি দ্রুত সুস্থ হয়ে সব আগাছা মুক্ত করে আবারও দলের হাল ধরবেন এবং পূর্বের হারানো ঐতিহ্য ধারন করে বাংলাদেশের গণমানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষা পূরণে তার আপোষহীন সংগ্রামী জীবনের ঐতিহাসিক কাজে আত্মনিয়োগ করতে সক্ষম হবেন।
Leave a Reply