কক্সবাজার সংবাদদাতা :ইব্রাহিম মোস্তফা ও আব্দুল্লাহ আল যোবাইর,
উখিয়া থেকে অপহরণের শিকার হয়েছেন কক্সবাজার সিটি কলেজের ওসমান গণি নামে এক এইচএসসি পরীক্ষার্থী। পরীক্ষা দিতে যাওয়ার পথে মুখে স্প্রে করে অজ্ঞান করে তাকে অপহরণ করা হয় বলে অভিযোগ তার। অলৌকিকভাবে রক্ষা পাওয়া ওই শিক্ষার্থী বর্তমানে নিরাপদে রয়েছেন এবং অংশগ্রহণ করতে না পারা পরীক্ষাসহ বাকী পরীক্ষাগুলো দিতে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন।
পরিবার সূত্রে জানা গেছে, গত ১ জুলাই মঙ্গলবার সকালে ৮টা ৩০ মিনিটে কক্সবাজারে পরীক্ষা কেন্দ্রে যাওয়ার জন্য মরিচ্যা লালব্রিজ এলাকা থেকে সিএনজি অটোরিকশায় যাত্রা শুরু করেন ওসমান। রামু সেনানিবাস এলাকায় পৌঁছালে পাশে বসা দুজন অজ্ঞাতনামা অপহরণকারীরা তার মুখে এক ধরনের স্প্রে করে অজ্ঞান করে ফেলে। কিছুক্ষণ পর জ্ঞান ফিরলে তিনি নিজেকে একটি কালো গ্লাসের নোহা মাইক্রোবাসে আবিষ্কার করেন, যেখানে পাশে থাকা দুই ব্যক্তি পুনরায় তার মুখে স্প্রে করে অজ্ঞান করে দেন। দ্বিতীয়বার জ্ঞান ফিরে দেখেন, তিনি চারদেয়ালের একটি কক্ষে বন্দি, যা সম্ভবত একটি অপহরণকারীদের আস্তানা।
ওসমান জানান, বন্দিশালার ওয়াশরুমের ভেন্টিলেটর ভেঙে কোনোভাবে পালিয়ে যান তিনি। প্রায় দেড় ঘণ্টা হাঁটার পর তিনি চট্টগ্রামের ষোলশহর রেল স্টেশনে পৌঁছান এবং পুলিশের সহায়তায় নিরাপদে বাড়ি ফিরে আসেন বুধবার।
অপহরণের সময় তার সঙ্গে থাকা কলেজের অ্যাডমিট কার্ড ও রেজিস্ট্রেশন কার্ড নিয়ে যায় অপহরণকারীরা। তিনি আরও জানান, অপহরণকারীরা তার পরিবারের যোগাযোগ নম্বর চাইলে তিনি নিজেকে এতিম পরিচয় দেন, ফলে হয়ত বড় ধরনের অনিষ্ট থেকে রক্ষা পান।
বন্দিদশায় থাকার সময় তিনি আরও কিছু মানুষের কান্নার শব্দ শুনতে পান, যেখান থেকে ধারণা করা হচ্ছে, সেখানে আরও অপহৃত ব্যক্তিরা থাকতে পারে।
ওসমান জানান, অপহরণের দিন ছিল এইচএসসি ইংরেজি প্রথমপত্র পরীক্ষা, যা তিনি দিতে পারেননি। তবে বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠাতব্য ইংরেজি দ্বিতীয়পত্রসহ পরবর্তী সব পরীক্ষা দিতে চায় তিনি। দিতে না পারা পরীক্ষাও বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করে দিতে চায় পরীক্ষা৷ পাশাপাশি অপহরণকারীদের আইনের আওতায় আনারও জোর দাবি জানিয়েছেন।
অপহৃত শিক্ষার্থী উপজেলার রত্নাপালং ইউনিয়নের কামারিয়ারবিল এলাকার হাজ্বী নুর আহমদের ছোট ছেলে৷ তিনি পড়াশোনার জন্য মরিচ্যা নানার বাড়ি অস্থায়ীভাবে থাকেন৷
এ ঘটনায় স্থানীয় প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে অবহিত করা হয়েছে। স্থানীয়দের দাবি, পুরো ঘটনার পেছনে একটি সংঘবদ্ধ অপহরণচক্র কাজ করছে, যা অবিলম্বে চিহ্নিত করে উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
পরীক্ষার্থীর পিতা হাজী নুর আহমদ জানান, আমার ছেলে যাতে পরীক্ষা দিতে পারে সে ব্যাপারে কলেজের অধ্যক্ষসহ সংশ্লিষ্ট সবার সহযোগিতা চাই। আমার ছেলে যে পরীক্ষা দিতে পারেনি সেটা দেওয়ার ব্যবস্থা করার আহ্বান জানাচ্ছি। পাশাপাশি বাকি পরীক্ষাগুলো আমার ছেলে অংশগ্রহণ করার ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানাচ্ছি৷
কক্সবাজার সিটি কলেজের অধ্যক্ষ আক্তার চৌধুরী জানান, ওই ছাত্রের অ্যাডমিট কার্ড এবং রেজিস্ট্রেশন কার্ডের ব্যবস্থা করা হয়েছে। বাকী পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারে। তবে ইংরেজি প্রথমপত্র পরীক্ষাটির বিষয়ে শিক্ষা বোর্ড সিদ্ধান্ত নিবে৷ পরীক্ষা কেন্দ্র কক্সবাজার সরকারি কলেজের অধ্যক্ষের সাথেও কথা বলি নিশ্চিত করেছি আগামীকাল থেকে বাকী পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করবে।
রামু থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. তৈয়বুর রহমান জানান, গতকাল এক ছাত্র আমাদের থানায় এসে অপহরণের চেষ্টা থেকে কৌশলে পালিয়ে আসার কথা জানিয়েছেন। ওই ছাত্র থানা একটি জিডি করেছেন। এ বিষয়ে আমরা তদন্ত শুরু করেছি।
Leave a Reply