1. admin@currentnews-24.com : currentnews :
শনিবার, ২৪ মে ২০২৫, ০১:৪৯ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
অধ্যক্ষ রহমত উল্লাহ সিকদারের বড় ভাই জলিল সিকদারের মৃত্যুতে পালং ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশনের শোক প্রকাশ  উখিয়ায় ৪ দফা দাবীতে মানব বন্ধন কর্মসূচী পালন করেছে  বাংলাদেশ কেমিস্ট অ্যান্ড ড্রাগিস্ট সমিতি “ফ্রেন্ডশিপ স্পোর্টিং ক্লাব” কর্তৃক কৃতি ক্রীড়াব্যক্তিত্বদের সংবর্ধনা প্রদান উখিয়ায় ইয়াবাসহ স্কুল শিক্ষক গ্রেফতার – পরিবারের দাবী ‘ষ’ড়’যন্ত্র উখিয়ায় বলির ছলে জুয়ার আয়োজনের চেষ্টা, আতঙ্কে স্থানীয়রা মরহুম নুরুল আবছারের স্মরণ সভা ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত   ড. আ জ ম ওবায়েদুল্লাহ ছিলেন সাহিত্য—সাংস্কৃতিক অঙ্গনের দিকপাল উখিয়া ও রামু প্রশাসনের সাঁড়াশি অভিযানে দু’উপজেলার বিভিন্ন স্থান থেকে অনধিক ১০টি করাতকল উচ্ছেদ ও উদ্ধার  আকাশমনি গাছের চারা রোপণ, উত্তোলন ও বিক্রয় নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে সরকার গতকাল বুধবার প্রধান উপদেষ্টা তাঁর চট্টগ্রাম সফরকালে চট্টগ্রাম বন্দর পরিদর্শন করেন। 

জামায়াত এগিয়ে অন্যান্য ইসলামিক দলগুলো পিছিয়ে কেন? এম রহিম উল্লাহ

  • প্রকাশিত : মঙ্গলবার, ২৫ মার্চ, ২০২৫
  • ৯৫ বার পাঠ করা হয়েছে

জামায়াত এগিয়ে অন্যান্য ইসলামিক দলগুলো পিছিয়ে কেন? 

বাংলাদেশে সদ্য সংগঠিত চব্বিশের রক্তস্নাত জুলাই বিপ্লবের পরে ইসলামী রাজনীতির গ্রহনযোগ্যতা ও ইসলামী নেতৃত্বের প্রতি সাধারণ মানুষের আগ্রহ ব্যাপকহারে বৃদ্ধি পেয়েছে। কারণ স্বাধীনতা পরবর্তী সময় থেকে এখন পর্যন্ত অনৈসলামিক দলগুলোর শাসনব্যবস্থায় তিক্ত অভিজ্ঞতার কারণে মানুষ এখন বিরক্ত। এসব দলকে বিশ্বাস করে জনগণ বারবার ধোঁকায় পড়েছে। দেশের বিশাল জনগোষ্ঠীর বড় একটা অংশের মনে এখন স্বাভাবিকভাবেই আগ্রহ জন্ম হয়েছে ইসলামী শাসনব্যবস্থা দেখার জন্য। তার অন্যতম কারণ হচ্ছে পতিত ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগের শাসনামলে এই দলগুলোর প্রতি অবর্ণনীয় জুলুমের পরেও তাদের ত্যাগ তিতিক্ষা আর আপোষহীনতার কারণে জনগণ তাদেরকে সৎ, যোগ্য ও প্রকৃতপক্ষে দেশপ্রেমিক মনে করে। তবে জনগণের আগ্রহ থাকলেও আসলেই আমাদের দেশের ইসলামী রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে কি সেই সক্ষমতা আদৌ আছে? তারা যে ক্ষমতায় যেতেই পারবে বা জনগণের চাহিদার প্রেক্ষিতে তারা ভূমিকা রাখতে পারবে?! আবেগ দিয়ে বিচার না করে বিবেক খাটিয়ে বাস্তব প্রেক্ষাপটে আমাদেরকে বিবেচনা করা প্রয়োজন। আমাদের দেশের ইসলামী রাজনীতির ভিত্তি খুবই দুর্বল, বলতে গেলে খুবই নড়বড়ে। বেশিরভাগ ইসলামিষ্টদের অবস্থা জনগণের ভাবনার চেয়ে অনেক অপরিপক্ক। যার কারণে সাধারণ অনৈসলামিক দলের চেয়ে আমাদের দেশে ইসলামিক দল ও ফেরকার সংখ্যা বেশি। আর চাহিদা সত্ত্বেও জনগনই বা এতগুলো দলের মধ্যে কোনটাকে চয়েস করবে আর কোনটাকে বাদ দিবে! আদৌ কি ইসলামী শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার জন্য জনগণের সেই চাহিদা মেটাতে আমাদের ইসলামপন্থীরা সক্ষম? এবার আসুন বাস্তবতার আলোকে এসবের কয়েকটা পয়েন্টে আলোচনা করি।

বাংলাদেশে ইসলামী রাজনীতির প্রেক্ষাপটে অনেকে মনে করেন, মাওলানা মওদুদী (রহঃ)এর কারণে জামায়াত সাংগঠনিকভাবে এত এগিয়ে গিয়েছে। কথাটা আংশিক সত্য, তবে পুরোপুরি সঠিক নয়। কারণ, তাই হলে ভারত ও পাকিস্তানে জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশের চেয়ে শক্তিশালী হতো। অথচ সেখানে তাদের শক্তি বা সাংগঠনিকভাবে স্বাতন্ত্রিক অবস্থান বাংলাদেশের মতো দৃঢ় নয়। বাংলাদেশে জামায়াতে ইসলামী এগিয়ে গিয়েছে কিছু মানুষের সীমাহীন ত্যাগ-তিতিক্ষা ও কুরবানির বদৌলতে। অধ্যাপক গোলাম আজম, শহীদ মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী, শহীদ আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ, শহীদ আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী, শহীদ আবদুল কাদের মোল্লা, শহীদ মোহাম্মদ কামারুজ্জামান, শহীদ মীর কাশেম আলী, মাওলানা আব্দুস সোবহানদের মতো অসংখ্য মহান ব্যক্তিরা নিজেদের তাজা জীবন বিলিয়ে দিয়ে এই অবস্থান অর্জন করে দিয়েছেন। আদর্শিক কোন সংগঠনের চেইন অব কমান্ডের সিনিয়র নেতৃবৃন্দ যদি এভাবেই অকাতরে জীবন দিয়ে দিতে পারেন, তাহলে যে কোনো সংগঠনই দাঁড়িয়ে যাবে এবং এটা অত্যন্ত স্বাভাবিক। তারা শুধু জীবন দিয়েই ক্ষান্ত হননি, অকাতরে সম্পদ খরচ করেছেন। তাদের কর্মীরা নিজের উপার্জনের ৫% বা তার চেয়ে বেশি সংগঠনের জন্য দিয়ে দেয়। মীর কাসেম আলীর মতো অগণিত লোক অকাতরে দান করেছেন। তাদের জান ও মালের কুরবানির বরকতে তারা এগিয়ে গিয়েছেন। আর্থিক স্বচ্ছতায়ও তারা এগিয়ে। বায়তুল মালের অর্থ, দেশ-বিদেশ হতে প্রাপ্ত তহবিল-অনুদান, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের লাভ ইত্যাদি মিলিয়ে তাদের আর্থিক লেনদেনের পরিমাণ অনেক বেশি। তবুও অস্বচ্ছতা বিষয়ে তেমন কোনো কানাঘুষা শোনা যায়নি। যদিও ক্ষেত্র বিশেষে কোনোকোনো জায়গায় তাদের গুটিকয়েক নেতাকর্মীর দ্বারা আর্থিক খেয়ানত প্রকাশ পেলেও দলীয় খেয়ানত প্রকাশ পায়নি। এটা একটা বড় অর্জনের বিষয়। কারণ, অর্থই সকল অনর্থের মূল। আধুনিক শিক্ষিতদের মাঝে ইসলামকে তারা সুন্দরভাবে পেশ করতে পেরেছে। একসময় জেনারেল শিক্ষার সেক্টরে কলেজ ইউনিভার্সিটিতে যেই বিশাল আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত জনগোষ্ঠী গড়ে উঠত, তারা ইসলামী রাজনীতি বা কোরআনের শাসনব্যবস্থাকে ভীতিকর মধ্যযুগীয় বলে ধারণা করত। কিন্তু জামায়াতে ইসলামী সেক্ষেত্রে জেনারেল শিক্ষিত উচ্চশ্রেণির এই মানুষগুলোর সামনে ইসলামী রাজনীতিকে সুন্দরভাবে প্রেজেন্টেশন করতে সক্ষম হয়েছে। যার ফলে জামায়াতে ইসলামীর বর্তমান চেইন অব কমান্ড থেকে শুরু করে একেবারে গ্রামের তৃণমূল পর্যায়েও জেনারেল শিক্ষায় শিক্ষিতদের একটা বড় অংশ এই দলের সাথে সম্পৃক্ত, এবং তাদের মাধ্যমে অনেকক্ষেত্রে আলেমদের চেয়েও বেশি উপকার হচ্ছে। যেটা সচরাচর অন্যকোনো ইসলামিক দলের বেলায় চোখে পড়ে না। মাওলানা মওদুদী (রহঃ) এর অবদান এক্ষেত্রে অতুলনীয়। যার বিশাল সাহিত্য ভান্ডার, জ্ঞানগরিমায় ভরপুর অতুলনীয় রচনাবলি ও ইসলামকে সব সেক্টরে যুগোপযোগীকরণের জন্য যেভাবে উপস্থাপন করা প্রয়োজন ছিল বা আছে, সেভাবেই তিনি তার মেধা শ্রম যোগ্যতাও দক্ষতাকে কাজে লাগিয়ে ভূমিকা রেখে গিয়েছেন। তৎসঙ্গে বাংলা ভাষায় জগদ্বিখ্যাত আলেম ও দার্শনিক মাওলানা আবদুর রহীমের মতো মানুষ জামায়াতে ইসলামীর পক্ষে কাজ করেছেন। ইসলামের সমাজনীতি, অর্থনীতি, রাজনীতি, সুশাসন ইত্যাদি বিষয়ে তিনি প্রথম কলম ধরেন। এজন্যই বলা যেতে পারে জ্ঞানগত উৎকর্ষতায় তারা এগিয়ে যেতে সক্ষম হয়েছে।

কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রিক তাদের প্রচেষ্টা আর বিরামহীন মেহনতের কোনো জুড়ি নেই। বিশ্ববিদ্যালয়ের আঙিনায় কি হয় আমরা সবাই জানি। এমন অপবিত্র আঙিনায় তারা ইসলামের আলো জ্বালিয়েছে যুগোপযোগী কর্মপন্থা ও হৃদ্যতাপূর্ণ পরিবেশে দাওয়াতি কাজের মাধ্যমে। যুবক-যুবতীদের মাঝে প্রতিকূল মুহূর্তেও চরম ঝুঁকি নিয়ে কাজ করেছে। জামায়াত-শিবিরের মাঝে আত্মীয়করণের প্রবণতা কম। কম মানে কম, তবে কিছু কিছু হয়তো ব্যতিক্রম ক্ষেত্রে আছে। বলতে সদ্য সংগঠিত বিপ্লবের পরে অনেক জায়গায় এটা পরিলক্ষিত হচ্ছে, যেটা ঠেকানো প্রয়োজন। একজন গরিব কৃষক শ্রমিকের ছেলে শিবিরের সভাপতি বা সেক্রেটারি হয়ে যেতে পারে তার সাংগঠনিক যোগ্যতা ও সিলেবাস ভিত্তিক মানোন্নয়নের মাধ্যমে। জামায়াত তাদের সাংগঠনিক কাঠামোকে শুরু থেকেই একই সিস্টেমের ওপর ভিত্তি করে দাড় করিয়ে রাখতে সক্ষম হওয়ার অন্যতম কারণ হচ্ছে- এখানে পরিবারতন্ত্রের চর্চা শুন্যের কোটায়। জামায়াতের অনেক সিনিয়র নেতাদের সন্তান দলের সাথে সম্পৃক্ত থাকলেও তেমন গুরুত্বপূর্ণ হাইকমান্ডের দায়িত্বে নেই। আবার অনেক বড় বড় জামায়াত নেতার সন্তানরা দলের দায়িত্বের কাছেই ভিড়ে নি। যেমন জামায়াতের সাবেক আমীর অধ্যাপক গোলাম আজম যদি চাইতেন তার সন্তানদেরকে তার স্থলাভিষিক্ত করে যাওয়ার জন্য হয়তো ব্যবস্থা করতে সক্ষম হতেন। শুধু তিনিই নন, সাবেক আমীর মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী থেকে শুরু করে যেসব সিনিয়র নেতারা ফাঁসিতে ঝুলেছেন, অন্যান্য দলগুলোর মত পরিবারতন্ত্রের প্রভাব থাকলে এইসময়ে এসে তাদের সন্তানরাই জামায়াতের নেতৃত্বে আসতে পারতেন। এজন্য বলতে পারেন পারিবারিক প্রভাব সেখানে কম, যোগ্যতার প্রভাব বেশি। সুতরাং সবাই চাইবে যোগ্যতার ভিত্তিতে এগিয়ে যেতে। তবে জামায়াতের সাংগঠনিক মানোন্নয়নের ক্ষেত্রে তীব্র প্রতিযোগিতার সুযোগ রয়েছে। বাংলাদেশে জামায়াতের রাজনীতিতে বিভিন্ন সময়ে কিছু কিছু ক্ষেত্রে মতপার্থক্য হলেও তেমন ভাঙন হয়নি কখনো। মাওলানা আবদুর রহীম (রহঃ) জামায়াত ত্যাগ করে নতুন দল করলেও তেমন সুবিধা করতে পারেননি। এবি পার্টির মঞ্জুদের মতো কিছু লোক বের হয়ে নতুন দল করলেও জামায়াতের তেমন অসুবিধা হয়নি। জামায়াতের উল্লেখযোগ্য সংখ্যক লোক সংগঠনের জন্য নিবেদিতপ্রাণ হয়ে কাজ করে। রাত-দিন তারা ফুলটাইম রাজনীতিই করেন, জামায়াতকে নিয়েই ভাবেন। সংগঠনের প্রয়োজনে অনেকে সরকারি চাকরিও ছেড়ে দিয়েছেন। এমন নিবেদিতপ্রাণ মানুষ যেখানে থাকবে তারা তো এগিয়েই যাবে। মাওলানা মওদুদী (রহঃ) এর বিতর্কিত কিছু বিষয় নিয়ে বাংলাদেশের জামায়াত মোটামুটি নিরব ছিল। অন্তত আমার জানামতে সাংগঠনিকভাবে তারা তেমন জবাব দেয়নি। কিন্তু উর্দু ভাষায় পাকিস্তান জামায়াতে ইসলামী অনেক জবাবি কিতাবপত্র রচনা করেছে। বাংলাদেশের জামায়াত সেসব বিষয়ের জবাব না দিয়ে কাজে মনোযোগ দেওয়ায় সংগঠনকে এগিয়ে নিতে পেরেছে। কারণ, এসব ইলমী বিষয়ে জবাবের পর জবাব দিতে গেলে তাসালসুল লাজেম হয়ে যাবে, যার কোনো শেষ নেই, তর্কাতর্কি হবে, পাল্টা প্রতিক্রিয়া দেখা দিবে, বিভেদ জিইয়ে রাখার সুযোগ তৈরি হবে এবং বস্তুবাদী ইসলামবিরোধী নাক গলানোর সুযোগ পাবে। নিজস্ব প্রতিষ্ঠান বানিয়ে নেতাকর্মীদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করেছে জামায়াত। ব্যাংক, হসপিটাল, স্কুল-কলেজ, ডায়গনস্টিক সেন্টার ইত্যাদি অসংখ্য প্রতিষ্ঠান বানিয়েছে। সেখানে তাদের নেতাকর্মীদের কাজ দিয়েছে। তারা নিয়মিত বায়তুল মালে এয়ানতও দিবে এবং কখনোই তারা সংগঠন পরিত্যাগ করবে না। উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে তারা মেধাবীদের সর্বাত্মক সহযোগিতা করে। ফলে তারা সংগঠনে যুক্ত হয়। এভাবে রাষ্ট্র পরিচালনার যোগ্য লোক তৈরি করেছে জামায়াত। অসংখ্যা আইনজীবী, বিসিএস ক্যাডার, ডাক্তার, সরকারি কর্মকর্তা, কর্মচারী, শিক্ষক তৈরি করেছে তারা। এভাবে রাষ্ট্র পরিচালনার ক্ষেত্রে তারা এগিয়ে যেতে সক্ষম হয়েছে। তবে অপ্রিয় হলেও সত্য যে- বর্তমানে জামায়াতের মধ্যে একটা এলিট শ্রেণীর আধিপত্য লক্ষ্য করা যাচ্ছে, তাদের সাম্প্রতিক কর্মকান্ড খুবই দুঃখজনক ও উদ্বেগজনক। তারা চাইলে দুঃসময়ে যেই মধ্যবিত্ত বা গরীব পরিবারের সন্তানরা জুলুম নির্যাতন সহ্য করে মাঠ পর্যায়ের বিশাল জনশক্তিকে লিড দিয়ে সংগঠনকে ধরে রেখেছিল তাদেরকে এই সময়ে এসে প্রতিষ্ঠিত করতে পারবেন, তাদের ত্যাগের বিনিময়ে আজকে যারা এলিট-শ্রেণীর মর্যাদা পেয়েছেন, সেই এলিটদের কাছে এখন সংগঠনের মাঠপর্যায়ের ত্যাগী জনশক্তি এখন অবমূল্যায়নের শিকার হচ্ছে আগের সেই টেনে তুলে আনার যেই ধারাবাহিকতা ছিল, সেটার প্রতি গুরুত্ব দেওয়া এখন জামায়াতের জন্য খুবই প্রয়োজন। নাহলে সামনে সিনিয়র নেতৃত্বের জুনিয়রদের অনীহা প্রকাশ পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এরপরেও অন্যান্য দলের তুলনায় জামায়াতের মাঠপর্যায়ের এই কর্মীরা এতোটা আনুগত্যপ্রবণ, চরমভাবে সুযোগ সামনে থাকার পরেও কেবল আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য তারা নিজেদের মান অভিমান আর মূল্যায়ন অবমূল্যায়ন এগুলোকে তুচ্ছ মনে করে সংগঠনের জন্য নিবেদিত প্রাণভাবে কাজ করে যাচ্ছে। সাধারণ মানুষ মনে করে জামায়াত নিজেদের লোকবল দিয়ে রাষ্ট্র পরিচালনা করার যোগ্যতা রাখে। এই ধারণা তাদেরকে এগিয়ে দিয়েছে। দেশের সাধারণ মানুষ মনে করে জামায়াতের লোকজন অত্যন্ত সৎ। দুর্নীতির সঙ্গে তাদের কোনো সম্পর্ক নেই। এটাই বাস্তব। যদিও আঞ্চলিক পর্যায়ে কিছু নেতাকর্মী দুর্নীতিগ্রস্ত হয়েছে, সেটা ভিন্ন বিষয়, কিন্তু সাংগঠনিকভাবে তাদের বিরুদ্ধে বিহিত ব্যবস্থাও নেওয়া হয়ে থাকে। যে কোনো মানুষই অপরাধ করতে পারে। তবে সামগ্রিক দৃষ্টিকোণ থেকে তাদের লোকজন সততার পরিচয় দিয়েছে। চারদলীয় জোট সরকারের আমলে দুটি মন্ত্রণালয় অত্যন্ত সততার সঙ্গে পরিচালনা করেছেন তাদের লোকজন। বিশেষ করে পতিত ফ্যাসিবাদী শাসনের সময় জামায়াতের উপর রাষ্ট্রীয়ভাবে যেই জুলুম নির্যাতন করা হয়েছে তার ধারেকাছেও অন্যান্য ইসলামপন্থী দলগুলোর উপর হয় নি। যদিও ব্যক্তিগতভাবে অনেক ইসলামপন্থীরা জুলুমের শিকার হয়েছেন। অনেক ইসলামপন্থীরাই পতিত ফ্যাসিবাদী স্বৈরাচারের কাছে বশ্যতা স্বীকার করেছেন, কেউ কেউ আপোষের রাজনীতি করে সুবিধা নিয়েছেন। কেউ কেউ অবস্থা বুঝে নিজেদের রুপ পরিবর্তন করেছিলেন। কিন্তু এক্ষেত্রে জামায়াতের নেতৃত্ব ছিল শতভাগ উত্তীর্ণ। যার কারণ উচ্চপর্যায় থেকে একেবারে গ্রামের নিম্নপর্যায়ের কর্মীরাও একটা সাহসী আনুগত্যকে ধারণ করে টিকে থাকতে সক্ষম হয়েছে। এ-র ফলে দেশের সাধারণ মানুষের কাছে তাদের ত্যাগ তিতিক্ষা আর দুঃসাহসী আপোষহীন সংগ্রামী ভূমিকা প্রশংসনীয় হয়েছে। এইসময়ে এসে জামায়াত সাংগঠনিকভাবে অন্যদের চেয়ে এগিয়ে থাকার এটাও একটা উল্লেখযোগ্য কারণ। উপরের প্রত্যেকটি পয়েন্টে অন্যান্য ইসলামি দল অনেক পিছিয়ে আছে, শুধু শরীয়তের ফিকাহ বিষয়ের জ্ঞানগত উৎকর্ষতায় কওমি অঙ্গন এগিয়ে থাকবে, সেখানেও রাজনৈতিক দলগুলোর অংশগ্রহণ খুবই সামান্য। ইসলামী আন্দোলন, খেলাফত উভয় গ্রুপ, জমিয়ত, নেজামে ইসলামপার্টি, ইসলামী ঐক্যজোট ইত্যাদি ইসলামী দলগুলোর মাঝে উপরের কোনো বৈশিষ্ট্যই তেমন নেই বললেই চলে। যে কারণে তারা ইলমী খেদমতের ক্ষেত্রে এগিয়ে থাকলেও সাংগঠনিকভাবে রাজনীতির মাঠে অনেক পিছিয়ে রয়ে গিয়েছে। খতিবে আজম মাওলানা সিদ্দিক আহমদ, হাফেজ্জী হুজুর, শায়খুল হাদিস আল্লামা আজিজুল হক, মাওলানা মুহিউদ্দীন খান, মাওলানা শাহ আহমদ শফি, মাওলানা জুনায়েদ বাবুনগরী, মাওলানা সৈয়দ ফজলুল করীম, মুফতি আমিনী (রহঃ) এর মতো বড় বড় নামকরা আলেমরা ছিলেন। এমনকি বর্তমানে চরমোনাইর পীর মাওলানা রেজাউল করিম, মুফতি ফয়জুল করীম ও খেলাফত মজলিসের মাওলানা মামুনুল হকরাও বড় নামকরা আলেম, তবুও তাদের রাজনীতির গন্ডি সামনে বাড়ছে না। তার অন্যতম একটা কারণ হচ্ছে- জনগণের দৌড় গোড়ায় এসব আলেমদের যাতায়াত বা মোটেও কম, তাদের মাহফিল বা দলীয় কোন কর্মসূচি ছাড়া জনগণের কল্যাণে তাদের কাছে যাওয়া বা জনগণের কল্যাণে মাঠ পর্যায়ে তৎপরতা দেখাতে তারা অক্ষম। যেমন ধর্মীয় কোন সেনসেটিভ বিষয় নিয়ে এই দলগুলো তৎক্ষনাৎ জুমাবার কেন্দ্রিক কর্মসূচি পালন করে, কিন্তু দ্রব্যমূল্যের ক্রমাগত উর্ধগতির প্রতিবাদে তারক একটা কর্মসূচি পালন করতে পারেন না। এজন্যই জনগণ তাদেরকে ধর্মীয় নেতা হিসেবে মূল্যায়ন করলেও রাজনৈতিকভাবে গ্রহন করতে চায় না। ব্যক্তিগত জনপ্রিয়তা ও খ্যাতি, আর সাংগঠনিক শক্তি দুটি ভিন্ন জিনিস। এজন্য প্রতিটা ইসলামী দলকে বাস্তবতার নিরিখে সময়ের দাবিকে গুরুত্ব দিয়ে মাঠে ময়দানে জানান দেওয়ার মাধ্যমে নিজেদের অবস্থানকে সুসংহত করা প্রয়োজন। আমি বারবার একটা বিষয়ের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করি- সেটা হচ্ছে সব ইসলামিক দলগুলো নিজেদের দুর্বলতা চিহ্নিত করে সেগুলো কাটিয়ে ওঠে একে অপরের কাছাকাছি আসা এখন সময়ের দাবি। এক্ষেত্রে তারা বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের মাধ্যমে এক দলের অন্য দলের কাজে পরিপূরকের ভূমিকা রাখতে পারেন। যেমনটা তুরস্কে হয়েছে। পরবর্তী পর্বে অন্যান্য ইসলামিক দলগুলোর সম্ভাব্য অপার সম্ভাবনা নিয়ে লিখব ইনশাআল্লাহ।

সংবাদটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরো সংবাদ পড়ুন
কারিগরি সহযোগিতায়: জাগো হোষ্টার বিডি