ডেস্ক রিপোর্ট
তথাকথিত যুদ্ধাপরাধ এবং মানবতা বিরোধী অপরাধের মিথ্যা অভিযোগে জামায়াতে ইসলামীর নেতাদের ফাঁসি কার্যকর করতে শেখ হাসিনার মতো ফ্যাসিস্ট ভারতের মদদপুষ্ট সরকারকেও অনেক বড় বাধার সম্মুখীন হতে হয়েছে, বেগ পেতে হয়েছে। এর অন্যতম কারণ হচ্ছে বিএনপি। শেখ হাসিনার বিচার ব্যবস্থায় কথিত বানোয়াট যুদ্ধাপরাধের বিচার, মানবতা বিরোধী অপরাধের বিচার এগুলো সবই যে সাজানো নাটক ছিল এবং চারদলীয় ঐক্যজোটের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক প্রতিহিংসা, এটা বিএনপি খুব ভালোভাবে বুঝেছিল এবং বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে বিএনপি এর বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছিল। বিএনপির কোন নেতা কিংবা কোন মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডারকে আওয়ামীলীগ স্বীকার করাতে পারেনি যে- জামায়াতের কোন নেতা যুদ্ধের সময় সংগঠিত মানবতা বিরোধী অপরাধের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ছিল। বরং বিএনপির অনেক বাঘা বাঘা মুক্তিযোদ্ধা নেতারা তখন জামায়াতের পক্ষে অবস্থান নিয়েছিল এবং সাক্ষ্য দিয়েছিল জামায়াতের কোন নেতাকে তারা মানবতা বিরোধী অপরাধের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট পায়নি, এবং ইতিপূর্বে এরকম কোন অভিযোগ তারা পায়নি। টেলিভিশনে বিভিন্ন টকশোতে বিএনপি নেতাদের অনেক মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার স্বপ্রণোদিত হয়ে সাহসের সাথে এই বক্তব্যগুলো তুলে ধরেছেন। তারা আল্লামা সাঈদীকে কিংবা অন্য কোন নেতাকে কোন ধরনের অপরাধের সঙ্গে জড়িত বলে অভিযোগ পর্যন্ত পাননি। কিন্তু ৫ই আগস্টের পর সেই বিএনপি আবার কেন সেই একাত্তরের পঁচা শামুকে পা কাটার জন্য জামায়াতকে ঠেলে দিচ্ছে? এটা কি শুধুই রাজনৈতিক গেইম অর্জনের জন্য? ক্ষমতার জন্য? নাকি এটি ভারতেরই কোন এজেন্ডা? বিএনপি চার দলের জোট গঠন করেছিল, জামায়াতের পক্ষ নিয়েছিল, জামায়াতকে তাদের পক্ষে নিয়েছিল ক্ষমতার জন্য। অতএব জামায়াত কখনোই বিএনপির ক্ষমতার জন্য বাধা হয়ে দাড়াবে এরকমটি বিএনপি যদি ভেবে থাকে, তাদের সেই ভাবনা অমূলক। তবে প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী হবে জামায়াত এটা ছিল নিশ্চিত। সমস্যা হচ্ছে আমাদের দেশের রাজনৈতিক দলগুলো এখনো প্রতিপক্ষ এবং প্রতিদ্বন্দ্বী এই দুটো টার্মের ফারাকটাই আজ পর্যন্ত বুঝতে শেখেনি। এমনকি প্রতিপক্ষ মানে যে শত্রু নয় প্রতিদ্বন্দ্বী মানেই প্রতিপক্ষ নয় এই ব্যাপারটা ও তারা বোঝে না। আপনার জয়ের জন্যও একজন প্রতিদ্বন্দ্বী লাগে। জাতীয় সংসদকে কার্যকর করতে গণতান্ত্রিক পদ্ধতি ধরে রাখতে আপনার তো প্রতিদ্বন্দ্বী লাগবে, সেই প্রতিদ্বন্দ্বী জামায়াত হলে আপনার আপত্তি কেন? জামায়াত প্রতিদ্বন্দ্বী হলে পরবর্তীতে তারা আপনাদের ক্ষমতা কেড়ে নেবে? তাহলে আপনারাও কি আজীবন ক্ষমতায় থাকতে চান? আপনারা চান কেউ কোনদিন আপনাদের ক্ষমতা কেড়ে না নিক?! নাকি আপনারা যা খুশি তাই করতে পারবেন? জামায়াত বাধা হয়ে দাঁড়াবে এই ভয় যদি থাকে তাহলে তো সেটা ভালো। সেটাই তো গণতন্ত্র:! আপনারা স্বেচ্ছাচারী হতে পারবেন না, আপনাদেরকে স্বেচ্ছাচারী হয়ে ওঠা থেকে বাধা দেবে এবং রক্ষা করবে প্রতিদ্বন্দ্বী দল, এটাই তো হওয়ার কথা! তাহলে তাতে এত আপত্তি কেন? এখানেই সবচেয়ে বড় সংশয়, এই আপত্তি কি বিএনপির নাকি ভারতের? ইতোমধ্যে এটা মোটামুটি ওপেন সিক্রেট যে এই এজেন্ডা ভারতের। কেবল ভারত চাচ্ছে বাংলাদেশের ইসলামিক দল তথা জামায়াতে ইসলামী রাজনীতির মাঠ থেকে বিলীন হয়ে যাক। আওয়ামী লীগের মাধ্যমে এই এজেন্ডা বাস্তবায়ন করতে গিয়ে ভারত আওয়ামী লীগকে বাংলাদেশ থেকে বিলীন করে দিয়েছে, এখন একই মিশন যদি তারা বিএনপিকে দিয়ে সাকসেস করতে চায়, তাহলে বিএনপিও একদিন বিলীন হয়ে যাবে না এমন নিশ্চয়তা ভারত কি দিতে পারবে? বরং জামায়াত বারবার ফিরে ফিরে তাকাচ্ছে যে- বিএনপি তাদেরকে মনস্তাত্ত্বিকভাবে আওয়ামী আগ্রাসনের বিরুদ্ধে মানবতা বিরোধী অপরাধের যে খড়গ তাদের উপর ছিল সেটি মোকাবেলায় সহযোগিতা করেছে। যদি বিএনপি আওয়ামী লীগকে সহযোগিতা করত আওয়ামী লীগ জামায়াতকে হয়তো আরও বেশি নিপীড়ন করার সুযোগ পেতো, গলা টিপে মেরে ফেলতো কোন আইনের তোয়াক্কা করত না। অথবা আইনের মাধ্যমে বিচারিক নাটকও করতে পারত না। অতএব সেই বিএনপি ৫ই আগস্টের পর জামায়াতের শত্রু হবে এটা জামায়াত ঘুণাক্ষরেও চায়নি। এটা মূলত প্রতিবেশী রাষ্ট্রের একান্ত চাওয়া।বিএনপি যদি সত্যিকারের অর্থে ভারতীয় এজেন্ডা বাস্তবায়ন করতে না চায় বা ভারতকে সুযোগ দিতে না চায়, তাহলে অবিলম্বে তাদের জামায়াত বিরোধী অবস্থান পরিত্যাগ করতে হবে। বিএনপি জামায়াতের বিরুদ্ধে গলাবাজি না করলে জামায়াত নেতাকর্মীরা কখনোই বিএনপির বিরুদ্ধে টু শব্দও করবে না, তবে চাঁদাবাজি সন্ত্রাস আর মিথ্যা প্রোপাগাণ্ডার বিরুদ্ধে জামায়াতে ইসলামীর অবস্থান অব্যাহত থাকবে।
রহিম ভাই বরাবরই তথাকথিত বুদ্ধিজীবী অপেক্ষা তাৎপর্যপূর্ণ কিছু লেখেন। আশাকরি এই লিখনি অব্যাহত থাকবে। শুভ কামনা রইল