তখন সম্ভবত ক্লাস এইট-এ পড়ি।
কর্মী টিসিতে একটা বক্তব্যে জনৈক বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক আমাদের বলছিলেন—চৌধুরী মাহমুদ হাসানের মতো বিজ্ঞানী হতে হবে, শাহ আব্দুল হান্নানের মতো অর্থনীতিবিদ হতে হবে, ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাকের মতো আইনজ্ঞ হতে হবে।’
তখন কাউকেই চিনতাম না। নামগুলো গেঁথে রেখেছিলাম।
ব্যারিস্টার রাজ্জাক সাহেবকে চিনেছি সেই রাতে, যে রাতে শহীদ কাদের মোল্লা ভাইকে কেন্দ্রীয় কারাগারে ফাঁসি দেওয়ার আয়োজন করা হচ্ছিল।
সব ঠিকঠাক, সম্ভবত রাত ১০.৩০টার দিকে ফাঁসি কার্যকর হবে।
ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক চেম্বার জজের কাছে গেলে রাত ৯.০০টার দিকে। আইনী কিছু পয়েন্ট তুলে ফাঁসির আদেশ কার্যকরের বিরুদ্ধে তাৎক্ষণিক স্টে অর্ডার নিলেন।
মুশকিল হলো, ততক্ষণে অনেকটা সময় পেরিয়ে গেছে। ফাঁসির মঞ্চ প্রস্তুত।
পরিস্থিতি তখন ভয়াবহ। চারদিকে সুনসান নীরবতা আর জিঘাংসু নেকড়ে চোখ। সাধারণ মানুষ তো বটেই, রাস্তায় ডিফেন্স টিমেরও কেউ নিরাপদ নন। জুনিয়র কাউকে তো মেরেই ফেলবে।
ব্যারিস্টার রাজ্জাক সাহেব নিজেই নাজিমুদ্দিন রোডের কেন্দ্রীয় কারাগারের দিকে ছুটলেন। রাস্তায় কিছুটা জ্যাম আর ঝামেলা। কারাফটকের সামনে বুনো উল্লাসে কিছু পিশাচ।
ব্যারিস্টার সাহেব গাড়ি থেকে নেমে প্রায় দৌড় দিলেন কারাফটকে। মৃত্যুঝুঁকি ছিল, তিনি উপেক্ষা করলেন।
নির্ধারিত সময়ের আগেই তিনি জেলগেটে স্টে অর্ডার পৌঁছে দিলেন। সেদিনের মতো কাদের মোল্লা ভাই পৃথিবীর বুকেই বেঁচে থাকলেন।
না, শেষ পর্যন্ত ব্যারিস্টার সাহেব কাদের মোল্লা ভাইয়ের শাহাদাত ঠেকিয়ে দিতে পারেননি। শাহাদাতের ফায়সালা তো আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের কাছে।
কিন্তু সেদিন বন্ধুকে ফাঁসির দড়ি থেকে রক্ষা করতে পাগলের মতো উন্মাদনা দেখেছি ব্যারিস্টার সাহেবের। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে অর্পিত দায়িত্ব নিষ্ঠার সাথে পালন করতে দেখেছি।
আজ তিনি তার শ্রদ্ধেয় সহকর্মীদের মিছিলে শামিল হয়েছেন। ইন্না-লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন।
রাব্বুল আলামিন, আপনি ব্যারিস্টার সাহেবের প্রতি রাজিখুশি থাকুন, ক্ষমা ও রহমতের চাদরে আবৃত রাখুন।
লিখেছেন-
নুর মোহাম্মদ আবু তাহের
চেয়ারম্যান-গুনাহার ইউনিয়ন পরিষদ।
বগুড়া, দুপচাঁচিয়া উপজেলা
Leave a Reply