1. admin@currentnews-24.com : currentnews :
শনিবার, ২৪ মে ২০২৫, ০৯:০৬ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম :
অধ্যক্ষ রহমত উল্লাহ সিকদারের বড় ভাই জলিল সিকদারের মৃত্যুতে পালং ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশনের শোক প্রকাশ  উখিয়ায় ৪ দফা দাবীতে মানব বন্ধন কর্মসূচী পালন করেছে  বাংলাদেশ কেমিস্ট অ্যান্ড ড্রাগিস্ট সমিতি “ফ্রেন্ডশিপ স্পোর্টিং ক্লাব” কর্তৃক কৃতি ক্রীড়াব্যক্তিত্বদের সংবর্ধনা প্রদান উখিয়ায় ইয়াবাসহ স্কুল শিক্ষক গ্রেফতার – পরিবারের দাবী ‘ষ’ড়’যন্ত্র উখিয়ায় বলির ছলে জুয়ার আয়োজনের চেষ্টা, আতঙ্কে স্থানীয়রা মরহুম নুরুল আবছারের স্মরণ সভা ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত   ড. আ জ ম ওবায়েদুল্লাহ ছিলেন সাহিত্য—সাংস্কৃতিক অঙ্গনের দিকপাল উখিয়া ও রামু প্রশাসনের সাঁড়াশি অভিযানে দু’উপজেলার বিভিন্ন স্থান থেকে অনধিক ১০টি করাতকল উচ্ছেদ ও উদ্ধার  আকাশমনি গাছের চারা রোপণ, উত্তোলন ও বিক্রয় নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে সরকার গতকাল বুধবার প্রধান উপদেষ্টা তাঁর চট্টগ্রাম সফরকালে চট্টগ্রাম বন্দর পরিদর্শন করেন। 

বদর: ইসলামের প্রথম সামরিক অভিযান-তৌহিদুল ইসলাম

  • প্রকাশিত : মঙ্গলবার, ১৮ মার্চ, ২০২৫
  • ৯৩ বার পাঠ করা হয়েছে
Oplus_131072

ইতিহাসের পাতায় কিছু যুদ্ধ কেবল বিজয় বা পরাজয়ের গল্প নয়; বরং তা আদর্শ, ঈমান ও আত্মত্যাগের এক চিরন্তন শিক্ষা হয়ে ওঠে। বদর যুদ্ধ এমনই এক অধ্যায়, যেখানে সংখ্যায় ছোট কিন্তু ঈমানের দৃঢ়তায় অটল একটি দল বিশাল ও শক্তিশালী বাহিনীকে পরাজিত করেছিল। এটি ছিল ইসলামের প্রথম বড় সামরিক পরীক্ষা, যেখানে ঈমানের শক্তি, তাওয়াক্কুল এবং আসমানি সাহায্য স্পষ্টভাবে প্রকাশ পেয়েছিল। বদর যুদ্ধে মুসলমানরা ছিল মাত্র ৩১৩ জন, তাদের কাছে অস্ত্র, রসদ, ঘোড়া বা উট পর্যাপ্ত ছিল না। অপরদিকে, কুরাইশরা এক হাজারেরও বেশি সেনা নিয়ে, সর্বোচ্চ অস্ত্র-শস্ত্রে সজ্জিত হয়ে যুদ্ধক্ষেত্রে নেমেছিল। কিন্তু আল্লাহ তাআলা এই যুদ্ধে তাঁর সাহায্য পাঠিয়েছিলেন ফেরেশতাদের মাধ্যমে, এবং মুসলমানদের জন্য এটি এক ঐশী বিজয়ে পরিণত হয়েছিল। বদরকে ছোট করে আলোচনা করা যাক।

১.
মদিনার বাতাসে এক অদ্ভুত শিহরণ। প্রতিটি মানুষ জানে, এক কঠিন মুহূর্ত আসন্ন। গোপন বার্তায় জানা গেছে- কুরাইশরা বিশাল বাহিনী নিয়ে এগিয়ে আসছে। প্রতিশোধের আগুনে জ্বলছে তারা।

রাসুলুল্লাহ (সা.) সাহাবাদের ডেকে পাঠালেন। মসজিদে নববীর মাটির মেঝেতে সবাই বসে পড়লেন। কারো মুখে হাসি নেই, সবার দৃষ্টি নবীজি (সা.)-র দিকে। যুদ্ধ কি করা হবে? তাদের সংখ্যা কম, অস্ত্র নেই, রসদের অভাব তীব্র। কিন্তু ঈমান কি পিছিয়ে যেতে দেয়? তখনই কুরআনের আয়াত নাজিল হল-

كَم مِّن فِئَةٍ قَلِيلَةٍ غَلَبَتْ فِئَةً كَثِيرَةًۭ بِإِذْنِ ٱللَّهِ ۗ وَٱللَّهُ مَعَ ٱلصَّـٰبِرِينَ
“অসংখ্য ছোট ছোট দল, আল্লাহর অনুমতিতে বড় বড় দলকে পরাজিত করেছে। আর আল্লাহ ধৈর্যশীলদের সঙ্গে আছেন।” (সূরা বাকারা: ২৪৯)

কুরআনের আয়াত মসজিদের পরিবেশ বদলে দিল। ঈমান যেন আরও দৃঢ় হলো। তখনই রাসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, “তোমরা কী বলো?” প্রথমে আবু বকর (রা.) দাঁড়িয়ে বললেন, “ইয়া রাসুলাল্লাহ! আমরা আপনার সঙ্গে আছি।” তারপর উমর (রা.) বললেন, “ইয়া রাসুলাল্লাহ! আমরা পিছু হটব না।”

এরপর মিকদাদ (রা.) দৃঢ় কণ্ঠে বললেন, “ইয়া রাসুলাল্লাহ! আমরা মুসার অনুসারীদের মতো বলব না যে, ‘তুমি এবং তোমার রব গিয়ে যুদ্ধ কর, আমরা বসে থাকব।’ বরং আমরা আপনার সঙ্গে লড়াই করব, আমরা আপনার ডান দিকে, বাম দিকে, সামনে ও পেছনে থেকে যুদ্ধ করব!”

কিন্তু রাসুল (সা.) আবার বললেন, “হে আনসারগণ! তোমরা কী বলো?” সবাই তাকিয়ে রইল আনসারদের দিকে। কারণ আনসাররা মদিনায় রাসুল (সা.)-কে আশ্রয় দিয়েছিল, কিন্তু তাদের প্রতিশ্রুতি ছিল মদিনার সীমার মধ্যে। এখন যুদ্ধ মদিনার বাইরে, তাই তাদের মতামত গুরুত্বপূর্ণ।

তখন সাদ ইবনে মু‘আয (রা.) দাঁড়িয়ে বললেন- “ইয়া রাসুলাল্লাহ! আমরা ঈমান এনেছি, আপনার প্রতি আনুগত্য করেছি, আমরা আমাদের প্রতিশ্রুতি রক্ষা করব। যদি তুমি আমাদের নিয়ে সমুদ্রেও ঝাঁপ দিতে চাও, আমরা তাতেও প্রস্তুত! আমরা লড়াই করব, আমরা আমাদের প্রতিশ্রুতি পালন করব, ইনশাআল্লাহ, আপনি আমাদের ধৈর্যশীল ও বিশ্বস্তই পাবেন।”

২.
মুসলিম বাহিনী বদরের কূয়ার কাছে এসে বিশ্রাম নিল। সামনের অনিশ্চিত যুদ্ধের কথা মাথায় রেখেও সবাই ছিলেন দৃঢ়চিত্ত। কিন্তু বাস্তবতা ছিল ভয়ানক- শুধু ৩১৩ জন সৈনিক, তাদের মধ্যে হাতে গোনা কয়েকজনের কাছে ছিল অস্ত্র, মাত্র দুটি ঘোড়া, কিছু উট, আর খাবারের স্বল্পতা।

অপরদিকে কুরাইশ বাহিনী এক হাজারেরও বেশি সৈন্য নিয়ে যুদ্ধক্ষেত্রে উপস্থিত, তারা ছিল পূর্ণরূপে সজ্জিত, অসংখ্য ঘোড়া ও উট নিয়ে সম্পূর্ণ প্রস্তুত। বাহ্যিক দৃষ্টিতে এ এক অসম যুদ্ধ।

রাত গভীর হলো। আশপাশের মরুভূমি নিস্তব্ধ, আকাশে জ্বলজ্বল করছে তারারাশি। সবাই ঘুমিয়ে পড়লেও রাসুলুল্লাহ (সা.) নিদ্রাহীন। তিনি একটি তাঁবুর মধ্যে দাঁড়িয়ে গেলেন, হাত তুলে আকাশের দিকে চাইলেন, এবং শুরু করলেন এক গভীর প্রার্থনা।

তিনি সিজদায় গিয়ে অশ্রুপাত করলেন। কেঁদে কেঁদে আল্লাহর কাছে ফরিয়াদ করলেন-
اللهم إن تهلك هذه العصابة من أهل الإسلام فلن تعبد في الأرض أبداً
“হে আল্লাহ! যদি আজ এই দলটি ধ্বংস হয়ে যায়, তবে পৃথিবীতে আর তোমার ইবাদত হবে না!”

নবীজির (সা.) কান্না এতটাই আবেগপূর্ণ ছিল যে, তাঁর চাদর কাঁধ থেকে পড়ে যাচ্ছিল। তখন আবু বকর (রা.) এসে তাঁকে শান্তনা দিলেন, চাদর উঠিয়ে আবার নবীজির (সা.) গায়ে জড়িয়ে দিলেন। আর বললেন, “ইয়া রাসুলাল্লাহ! যথেষ্ট হয়েছে, নিশ্চয়ই আল্লাহ আপনার দোয়া কবুল করবেন!”

৩.
১৭ রমজান, ২ হিজরি- বদর যুদ্ধের সকাল। মদিনার উত্তরে বদরের ময়দানে মুসলিম বাহিনী আজ প্রস্তুত। রাসুলুল্লাহ (সা.) নিজেই তাঁদের সারি সোজা করলেন, যেন প্রতিটি সৈনিক অনমনীয়ভাবে দাঁড়িয়ে থাকে, পুরোপুরি সজ্জিত।

এক সাহাবি, যিনি পিপাসার্ত ছিলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর সামনে গিয়ে বললেন, “ইয়া রাসুলাল্লাহ! আমি পিপাসার্ত।” রাসুল (সা.) তাঁর হাতে পানি দিয়ে তাঁর পিপাসা নিবারণ করলেন।

তৎপরেই যুদ্ধ শুরু হলো। কুরাইশরা শক্তিশালী, তাদের বাহিনীতে ছিলেন বেশ কিছু সুনামধন্য যোদ্ধা। ওমাইয়া ইবনে খালাফ, শায়বা ও উতবা- এই তিন কুরাইশ নেতার আগমন মুসলিম বাহিনীর জন্য চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াল। তারা একে একে নামলেন মুসলিমদের বিরুদ্ধে।

রাসুলুল্লাহ (সা.) তখন সাহাবিদের দিকে তাকিয়ে বললেন, “হামজা, আলী, উবায়দা- তোমরা এগিয়ে যাও!”

হামজা (রা.)-এর তরবারি আকাশে ঝলসে উঠল, যেন আসমান নিজেও ভয় পেয়েছিল। তাঁর শক্তিশালী আঘাতে কুরাইশদের একে একে পরাজিত করছিলেন। আলী ইবনে আবি তালিব (রা.)-এর তরবারির আঘাতে উতবার ঘোড়া ছিন্নভিন্ন হয়ে গেল, উতবা নিজে রক্তাক্ত হয়ে মাটিতে পড়ে গেলেন।

যুদ্ধে উবায়দা (রা.) আহত হলেন। তাঁর পায়ের গুরুতর আঘাত ছিল, কিন্তু তিনি ছিলেন দৃঢ় প্রতিজ্ঞ- তিনি যুদ্ধের ময়দান ছাড়বেন না। তিনি জীবিত ছিলেন এবং বিজয় অর্জন করেছিলেন, তাঁর সাহসিকতা ও ঈমানের প্রতি অটুট বিশ্বাস তাকে অনুপ্রাণিত করেছিল।

৪.
এরপর বদরের ময়দানেই সম্মুখ লড়াই শুরু হলো। রাসুলুল্লাহ (সা.) তখন আকাশের দিকে তাকিয়ে মাটির একটি মুঠো নিলেন। তিনি দৃঢ় কণ্ঠে বললেন-

سَيُهْزَمُ ٱلْجَمْعُ وَيُوَلُّونَ ٱلدُّبُرَ
“শত্রুর দল পরাজিত হবে এবং তারা পৃষ্ঠপ্রদর্শন করে পালাবে।” (সূরা কদর: ৪৫)

রাসুল (সা.) তখন মুঠোভর্তি মাটি শত্রুদের দিকে ছুঁড়ে মারলেন এবং বললেন, “চেহারাগুলো বিকৃত হয়ে যাক!” এই মুহূর্তে আল্লাহর সাহায্য নেমে এলো- এটি ছিল একটি অলৌকিক দৃশ্য। শত্রুদের সামনে আল্লাহর আছর এমনভাবে নেমে এলো, যেন তারা অন্ধ হয়ে যায়, তাদের চোখে-মুখে ভয় ভরপুর হয়ে গেল।

এরপর কুরআনে এসেছে—

إِذْ تَسْتَغِيثُونَ رَبَّكُمْ فَٱسْتَجَابَ لَكُمْ أَنِّى مُمِدُّكُم بِأَلْفٍۢ مِّنَ ٱلْمَلَـٰٓئِكَةِ مُرْدِفِينَ
“যখন তোমরা তোমাদের রবের কাছে সাহায্য প্রার্থনা করেছিলে, তখন তিনি বলেছিলেন, ‘আমি এক হাজার ফেরেশতা দ্বারা তোমাদের সাহায্য করব।’ (সূরা আনফাল: ৯)

এই মহাসাহায্য আল্লাহর পক্ষ থেকে আসছিল, যাতে মুসলিমরা নিশ্চিতভাবে জয়লাভ করতে পারে। ফেরেশতারা ছিল এক আল্লাহর নিদান- তারা মুসলিম বাহিনীর পাশে দাঁড়িয়ে শত্রুদের মোকাবেলা করছিল, তাদের সামনে বিপুল শক্তির প্রতিফলন ঘটাচ্ছিল। মুসলিমরা ঈমানের শক্তিতে বলীয়ান হয়ে যুদ্ধ করে গেল, আর কুরাইশ বাহিনী হতাশ ও ভীত হয়ে পিছু হটতে শুরু করল।

৫.
বদরের প্রান্তর রক্তে রঞ্জিত। ধূলিমাখা মরুভূমির বুকে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে পড়ে আছে কুরাইশদের গর্বভঙ্গ দেহ। যাদের দম্ভ একদিন মক্কার গলিতে গর্জন তুলেছিল, তারা আজ নিথর, নিশ্চল। যুদ্ধ শেষ। মুসলমানদের ছোট্ট কিন্তু ঈমানের শক্তিতে ভরা দল বিজয়ী হয়েছে।

কুরাইশ বাহিনী হতভম্ব হয়ে পালিয়ে গেছে। যারা মুহাম্মদ (সা.)-কে ও তাঁর অনুসারীদের ধ্বংস করতে এসেছিল, তারা আজ পরাজিত। একদিকে ৭০ জন নিহত, অন্যদিকে ৭০ জন বন্দি। বদরের বালুকাবেলায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে তাদের অস্ত্র, ঢাল, ভগ্ন রথ-যেন পরাজয়ের মূর্ত প্রতীক।

মৃত্যুর দুয়ারে দাঁড়িয়ে আছে মক্কার সবচেয়ে দাম্ভিক মানুষটি-আবু জাহল। যে ব্যক্তি নবী (সা.)-কে হত্যার ষড়যন্ত্র করেছিল, ইসলামের বিরুদ্ধে কঠোরতম প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিল, আজ সে বদরের মাটিতে লুটিয়ে আছে, ক্ষতবিক্ষত দেহ নিয়ে ধুলোয় গড়াগড়ি খাচ্ছে। আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) এগিয়ে এলেন। তিনি আবু জাহলের বুকের ওপর চড়ে বসলেন। পরাজিত কুরাইশ সর্দার তীব্র কষ্টের মাঝেও দম্ভ বজায় রেখে বলল, “তুমি খুব উঁচু জায়গায় উঠে বসেছ, হে ছাগল চরানো গরীব বালক!”

ইবনে মাসউদ (রা.) হাসলেন। আজ ধূলিসাৎ হয়েছে কুরাইশদের অহংকার। তিনি তলোয়ার উঁচু করলেন, তারপর বিদ্যুৎগতিতে নামিয়ে আনলেন। আবু জাহলের দেহ নিস্তেজ হয়ে গেল।

সেই মুহূর্তে আকাশভেদী এক ঘোষণা শোনা গেল। এক গম্ভীর কণ্ঠস্বর যুদ্ধের প্রান্তর কাঁপিয়ে বলল: “আজ বিজয় কার?” কুরাইশদের প্রতিটি সৈন্য, যারা পালাচ্ছিল, তারা থমকে দাঁড়াল। যারা বন্দি হয়েছিল, তারা শিহরিত হলো।

আর মুসলমানরা এক কণ্ঠে উচ্চারণ করল- “আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের!”

৬.
মুসলিম বাহিনী মদিনায় ফিরে এল। ক্লান্ত শরীর, কিন্তু অন্তরে আনন্দের এক প্রবল জোয়ার। বদরের রণাঙ্গনে তারা দেখেছে আসমানি সাহায্যের বাস্তবতা। দেখেছে, কীভাবে আল্লাহ তাঁর প্রিয় বান্দাদের বিজয় দান করেন।

ঠিক তখনই আসমান থেকে নাজিল হলো এক মহিমান্বিত ঘোষণা-
وَلَقَدْ نَصَرَكُمُ ٱللَّهُ بِبَدْرٍۢ وَأَنتُمْ أَذِلَّةٌ
“নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদের বদরে সাহায্য করেছেন, যখন তোমরা ছিলে দুর্বল।” (সূরা আনফাল: ৪২)

আয়াতটি যেন প্রতিটি মুসলমানের হৃদয়ে স্থির করে দিল এক মহান শিক্ষা-বিজয় সংখ্যা, অস্ত্র বা বাহুর শক্তির ওপর নির্ভর করে না; বরং তা নির্ভর করে ঈমান, তাওয়াক্কুল এবং আল্লাহর সাহায্যের ওপর। এটি ছিল সেই যুদ্ধ, যেখানে ধূলিসাৎ হয়েছিল কুরাইশদের গর্ব, আর উন্মোচিত হয়েছিল আল্লাহর রাসুল (সা.) ও তাঁর সাহাবিদের সত্যের পথে অবিচল থাকার পুরস্কার।

পরিশেষে, বদরের যুদ্ধ ছিল মুসলিম ইতিহাসের এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়, যা শুধু একটি সামরিক সংঘর্ষ ছিল না, বরং ঈমান, ত্যাগ, ধৈর্য এবং আল্লাহর উপর নির্ভরতার এক অমর নিদর্শন। ১৭ রমজান, ২ হিজরিতে ঘটে যাওয়া এই যুদ্ধ মুসলিমদের জন্য শুধু একটি শারীরিক বিজয় নয়, বরং আত্মিক শক্তির বিজয়ও ছিল। মুসলিম বাহিনীর ছোট্ট সংখ্যার মধ্যে ছিল ঈমানের বিশাল শক্তি, আর কুরাইশদের বিশাল বাহিনীও আল্লাহর ইচ্ছায় পরাজিত হলো।

রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর নেতৃত্বে, সাহাবিদের অবিচল সাহস এবং আল্লাহর সাহায্য তাদের অবিশ্বাস্য শক্তি এবং দৃঢ়তার প্রতীক হয়ে উঠেছিল। এই যুদ্ধের মধ্য দিয়ে প্রমাণিত হয়েছিল যে, আল্লাহর পথে, সঠিক উদ্দেশ্যে এবং ঈমানের শক্তিতে কোনো কিছুই অসম নয়।

বদরের যুদ্ধ কেবল তখনকার মুসলিমদের জন্য একটি বিজয় ছিল না, এটি পরবর্তী প্রজন্মের জন্য একটি শিক্ষা, যা তাদের জীবনযুদ্ধে দৃঢ়তার পথে পরিচালিত করবে। এটি এক অনুপ্রেরণা, যে ঈমানের শক্তি সব কিছুর চেয়ে বড়, এবং আল্লাহর সাহায্য সর্বদা প্রাপ্তির জন্য প্রস্তুত থাকে।

আজও বদরের যুদ্ধ আমাদের শিক্ষা দেয়, যখন আমরা সত্যের পথে চলি, আল্লাহ আমাদের সাহায্য করবেন, আমাদের প্রতি তার রহমত কখনো বিফলে যাবে না।

লেখক-

তৌহিদুল ইসলাম- এডভোকেট
লেকচারার (আইন বিভাগ)

বিজিসি ট্রাস্ট ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ।

সংবাদটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরো সংবাদ পড়ুন
কারিগরি সহযোগিতায়: জাগো হোষ্টার বিডি